[Article ti 2004 saler lekha! Jekhane sal nei sekhane 2004 porte hobe! The article was written in 2004! Please read 2004 where there is no year!]
বন ও বনের আদিবাসী : মধুপুর বনে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম
ভূমিকা:
আদিবাসী বলতে এমন জনগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা প্রাচীনকাল থেকে তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ভূমিতে বসবাস করছে, যাদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, পোষাক-পরিচ্ছদ, অলংকারাদি রয়েছে এবং তাদের নিজেদের সামাজিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় রক্ষণশীল; যা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে তাদের আলাদা করে।
- বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত আদিবাসী বিষয়ক সংজ্ঞা:
A description of Indigenous Peoples given by the World Bank (operational directive 4.20, 1991) reads as follows:
Indigenous Peoples can be identified in particular geographical areas by the presence in varying degrees of the following characteristics:
a) close attachment to ancestral territories and to the natural resources in these areas;b) self-identification and identification by others as members of a distinct cultural group;
c) an indigenous language, often different from the national language;
d) presence of customary social and political institutions;and
e) primarily subsistence-oriented production.
The World Bank's policy for indigenous people states:
Because of the varied and changing contexts in which Indigenous Peoples live and because there is no universally accepted definition of "Indigenous Peoples," this policy does not define the term. Indigenous Peoples may be referred to in different countries by such terms as "indigenous ethnic minorities", "aboriginals", "hill tribes", "minority nationalities", "scheduled tribes", or "tribal groups."[12]
- জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত আদিবাসী বিষয়ক সংজ্ঞা:
Indigenous communities, peoples and nations are those which, having a historical continuity with pre-invasion and pre-colonial societies that developed on their territories, consider themselves distinct from other sectors of the societies now prevailing in those territories, or parts of them. They form at present non-dominant sectors of society and are determined to preserve, develop, and transmit to future generations their ancestral territories, and their ethnic identity, as the basis of their continued existence as peoples, in accordance with their own cultural patterns, social institutions and legal systems.
Although Special Rapporteur to the UN on Indigenous peoples Erica-Irene Daes in 1995 stated that a definition was unnecessary because "historically, indigenous peoples have suffered, from definitions imposed by others" [16] Indigenous representatives also on several occasions have expressed the view before the Working Group that
...a definition of the concept of 'indigenous people' is not necessary or desirable. They have stressed the importance of self-determination as an essential component of any definition which might be elaborated by the United Nations System. In addition, a number of other elements were noted by indigenous representatives...Above all and of crucial importance is the historical and ancient connection with lands and territories[17]
বাংলাদেশে মোট ৪৫টি আদিবাসী জাতিসত্ত্বা বাস করে। সেগুলো হলো অহমিয়া/আসাম, উড়াঁও, কোচ, কর্মকার, কোল, ক্ষত্রিয়, বর্মন, খন্ড, খাড়িয়া, খুমি, খাসি, খিয়াং, গন্ড, গারো, গুর্খা, চাকমা, চাক্, তঞ্চংগা, তুরী, ত্রিপুরা, ডালু, পাংখু, পাহাড়িয়া, পাহান, পাত্র, বানাই, বম, বাগদি, বিদিয়া, ম্রো, মনিপুরী, মুন্ডা, মাহাতো, মুসহর, মরিয়ার, মাহালী, মালো রাজবংশী, রাই, রাজুয়ার, রাখাইন, লুসাঁই, সাঁওতাল, সিং ও হাজং। বাংলাদেশে ২৫ লক্ষাধিক আদিবাসী বসবাস করে। অবস্থানভেদে বাংলাদেশের আদিবাসীদের দু'ভাগে ভাগ করা হয়।
১. সমতলের আদিবাসী এবং
২. পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসী।
১. সমতলের অঞ্চলের আদিবাসী:
আমাদের দেশে আদিবাসীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও সুনামগঞ্জ জেলায় গারো, কোচ, হাজং; গাজিপুর, টাংগাইল জেলায় গারো, কোচ, বর্মন, ক্ষত্রিয়, রাজবংশী, বানাই; বৃহত্তর সিলেট জেলায় গারো, খাসিয়া, লুসাঁই, মনিপুরি বাস করে।
অপরদিকে রাজশাহী বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, নীলফামারি প্রভৃতি জেলায় সাঁওতাল, উড়াঁও, মুন্ডা, মাহালি, মালো, পাহাড়ি প্রভৃতি আদিবাসী বাস করে।
২. পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসী:
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি ও কঙ্বাজার জেলায় চাকমা, মারমা, মুরং, বোম, রাখাইন, ত্রিপুরা, পাংখু, খিয়াং, তঞ্চংগা, চাক্, লুসাঁই প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস করে।
আদিবাসীদের অধিকার:
১৯৯২ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে, জাতিগত, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক ও ভাষাগত সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য যে রাষ্ট্র সংখ্যালঘু নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজনে এর জন্য আইন তৈরী করবে।
জাতিসংঘের ভাষায়, “Article-1: (a) State shall protect the existence and he national or ethnic, cultural, religious and linguistic identify of minorities within their respective territories and shall encourage conditions for the promotion of that identify.
(b) State shall adopt appropriate legislative and other measures to achieve those ends.”
জাতিসংঘে এ পর্যন্ত -এর মোট ৮টি বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘ ১৯৯৫-২০০৪ সালকে আদিবাসী দশক হিসাবে ঘোষণা করেছে। উদ্দেশ্য ছিল সারা বিশ্বব্যাপী আদিবাসী মানুষের অধিকারের বিষয়ে বিশ্বের মানুষকে সচেতন করে তোলা। আদিবাসী অধিকার বিষয়ক এ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন আন্তর্জাতিক আদিবাসী দশকের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য। ঘোষণাপত্রের এ পর্যন্ত ১৯টি মুখবন্ধ ও ৪৫টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত (৯টি খন্ডে বিভক্ত) হলেও এ ঘোষণাপত্রের মাত্র ৫নং ও ৪৩ নং এই ২টি অনুচ্ছেদ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এখানে আদিবাসীদের শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণাপত্রে আদিবাসীদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার কথা বিস্তারিতভাবে স্বীকার করা হয়েছে। এ ঘোষণাপত্রে অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে নিম্নোলেখিত অধিকারসমূহের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে:
- আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার।
- মাতৃভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার।
- সমষ্টিগত মালিকানার অধিকার।
- ভূমি, খূখন্ড ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণের অধিকার।
- সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সংরক্ষণের মাধ্যমে আদিবাসীদের নিজস্ব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুশীলন/রক্ষণ এবং উন্নয়নের অধিকার।
- আদিবাসী জনগণের উপর, তাদের সম্পত্তি ও ভূখন্ডের উপর প্রভাব ফেলে এমন যেকোন কাজের/উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীন, সম্মতি নেওয়ার কথা ও তাদের কার্যকরী অংশগ্রহণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- আদিবাসী নিজেদের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার ও শাস্তি লাভের অধিকার।
- বিভিন্ন দেশে বসবাসরত একই গোত্রের আধিবাসীদের সাথে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদির করার অধিকার।
এছাড়াও ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ “Convention on Economic, Social and Cultural Rights Ges Convention on Civil and Political Rights" ঘোষণা করে। উভয় কনভেনশনেই ঘোষনা করা হয় যে, সকল মানুষেরই "আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে।" এই অধিকারের বলেই তারা স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক উন্নয়নের পন্থা নির্ধারণের অধিকার রাখে। এর ২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- "যে সকল রাষ্ট্রে নৃ-তাত্ত্বিক, ধর্মীয় বা ভাষাভিত্তিক সংখ্যা লঘু বাস করেন, সেখানে ঐ সব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির মানুষেরা ব্যক্তিগত গোষ্ঠীগতভাবে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজেদের ধর্ম অনুসরণ করার ও তা প্রচার করার অধিকার এবং নিজেদের ভাষা ব্যবহারের অধিকার নিরঙ্কুশভাবে ভোগ করবে।"
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) ১৯৭৫ সালে Indigenous and Tribal Poplations Convention (১০৭ নং) গ্রহণ করে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন এবং তাদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো দায়িত্ব পালন করবে। এই কনভেনশনের আদিবাসী জনগণের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং আর্থিক নিরাপত্তা ও বিশেষ সাংস্কৃতি বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণসহ তাদের পার্থিব কল্যাণ ও আধ্যাত্মিক উন্নতির কথা স্বীকৃতি পায়।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের বর্তমান অবস্থাঃ
আদিবাসী জনজীবনের সীমাহীন শোষণ-বঞ্চনা অনাধিকাল থেকেই নিরন্তরভাবে চলে এসেছে। যুগে যুগে, কালে কালে আমাদের দেশে এই শোষণ-বঞ্চনার চিত্র প্রায় একই রকম দেখা যায়। নিজেদের ভূমির উপর তাদের কোনই অধিকার কিংবা নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং জমি নিয়েই তাদের বঞ্চনা আর বিড়ম্বনার অন্ত নেই। তারা তাদের ভূমি, ভাষা ও সংস্কৃতি অতিদ্রুত হারিয়েই চলেছে।
তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকালে এই শোষণ-বঞ্চনার চিত্র শুধু ভয়াবহই নয়; অবর্ণনীয়ও। দেশ স্বাধীনতার তিন দশকের বেশী সময়েও এ দেশে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলেনি/দেওয়া হয়নি। নিজেদের দেশে তারা আজও পরবাসী; পরাধীন। দেশ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই তারা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত, শোষিত-বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে এই নির্যাতন-নিষ্পেষণ, শোষণ-বঞ্চনার মাত্রা ক্রমাগত পাগলা ঘোড়ার মত নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নিজেই সব থেকে বড় শোষকের কিংবা উৎপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাদেরকে যেখানে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে আদিবাসীদের নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকারসহ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক,আইনী সহায়তা পাওয়ার অধিকার থেকে তারা পুরোপুরিভাবেই বঞ্চিত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
কিন্তু অত্যন্ত বেদনার সাথে বলতে হয় সরকার ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর তাদের চুক্তির মাধ্যমে কিছু অধিকার অর্জনের লিখিত দলিল দেওয়ার নামে আদিবাসী জনগণের সাথে প্রতারণাই করেছেন। কেননা সে চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন আজও হয়নি। এক কথায় বলা যেতে পারে আদিবাসীদের সামগ্রিক অবস্থা আজ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌচ্ছেছে।
পার্বত্য এলাকার বাইরের আদিবাসীদের চিত্র আরো বেশী বেদনার, আরো বেশী ভয়াবহ। বৃহত্তম রাজশাহীর আদিবাসী নেতা আলফ্রেট সরেনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। মধুপুরের আদিবাসীরা একের পর এক খুন হচ্ছে। সরকার সেখানে সরাসরি খুনীদের মদদ দেয়; পুলিশ, বন পুলিশ দিয়ে খুন করে, নিরীহ, নিরপরাধ, অসহায় আদিবাসীদের হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের সর্বশান্ত করে। একেক জনের নামে ৩৫-৪০টি রয়েছে সেখানে। জেল খাটছে অনেকেই। জেলে থাকার সময়েও মামলা হচ্ছে অহরহ। দেড় বছরের শিশু থেকে শত বছরের বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। বনবিভাগের বনরক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছে বিহেন নকরেক (৩৫), অধীর দফো (৩০) প্রমুখ।
মৌলভীবাজার ও মধুপুরের আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে ইকো-পার্ক করার নীলনঙ্া করা হয়েছে। মধুপুরে আদিবাসীদের পিতৃভূমিতে ইকো-পার্ক করার প্রতিবাদে গত ৩রা জানুয়ারী তারিখে আদিবাসীদের নিরস্ত্র শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকারী পুলিশ বাহিনী এবং বনরক্ষী নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে পীরেন স্নাল (২৭) কে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছে শিশু ও নারীসহ ৩৫জন। গুলিবিদ্ধ উৎপল নকরেক (২২) পঙ্গু হয়ে গেছে চিরদিনের জন্য।
২০শে মার্চ, ২০০১ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে আদিবাসী নারী নেত্রী গিদিতা রেমা (২৫) কে হত্যা করা হয়। বড়দিনের দিন খুন হয় নিন্তনাথ হাদিমা (২৪), সেন্টু নকরেক (২২) প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলেও তারা কেউই বিচার পায়নি। বিমান বাহিনীর জন্য ফায়ারিং রেঞ্জের নামে, সামাজিক বনায়নের নামে, তথাকথিত উন্নয়নের নামে, ইকো-পার্ক, ন্যাশনাল পার্কের নামে এখানে সরকার নিজেই আদিবাসীদের উচ্ছেদের নীলনক্সা করে প্রতিনিয়ত।
ন্যাশনাল পার্ক/জাতীয় উদ্যান ঘোষণা এবং গারো আদিবাসীদের সংগ্রাম:
১৯৬২ সালে শালবনের প্রাণ-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন বিষয়ক শিক্ষা এবং ধনিক শ্রেণীর চিত্তবিনোদনের মানসে আইজেরীয় মডেলে ২০,৮২২ একর শালবন জুড়ে মধুপুর উদ্যান ঘোষণা করা হয়। আদিবাসীদের জন্য যথারীতি উচ্ছে নোটিশ আসে। গারো আদিবাসীদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের ঘর-দরজা সারাতে বলা হয়। ঐ এলাকার চতুর্পাশে কাটা তার দিয়ে বেষ্টনী তৈরী করা হয়। তখনই আদিবাসীরা একে তাদের স্বার্থ বিরোধী, তাদের মতামতের গুরুত্ব না দেয়ার কারণে এই জাতীয় উদ্যানের বিরোধিতা করে তার প্রতিবাদ করে।
তৎকালীন সরকার দমন-পীড়নের আশ্রয় নেয়। নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়ায় এবং ধর পাকড়েরও আশ্রয় নেয়। গারো আদিবাসীরা লড়াই সংগ্রামের জন্য ১৯৬২ সালে ২রা মার্চ "জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ" নামে একটি সংগঠনের গোড়াপত্তন করেন। ১৯৮৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার আবার তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে এবং প্রবল আন্দোলনের মুখে তা করতে ব্যর্থ হয়। ২০০২ সাল থেকে বর্তমান সরকার আবার জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গারোদের উচ্ছেদ করে ইকো-পার্ক করার। এ পর্যন্ত কয়েকজন নেতা জেল খেটেছেন কিছুদিন। সড়ক অবরোধের মুখে জেলা প্রশাসন তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়েছেন। ৬০ দশকেই পাক সরকার কৃষি ফার্ম করার নামে হাজার হাজার বাঙ্গালীদের মধুপুরের কাকরাইদ থেকে আদিবাসী গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করে।
আদিবাসীদের পুনর্বাসন নাটক:
১৯৭৯ সালে বনবিভাগের ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ অনুযায়ী সরকার প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে "Urban Development Programme"-এর আওতায় আবিমায় (মধুপুরে) বসবাসরত ১৫,০০০ গারো (সরকারী হিসাব মতে ১০,০০০) আদিবাসীদেরকে 'ফুলবাগচালা' নামক স্থানে সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। গুচ্ছ গ্রাম মডেলে ২টি আধাপাকা ঘরও নির্মাণ করে। গারো আদিবাসীদের কোনরূপ মতামত, তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা না করেই তাদের গায়ের জোরে বন থেকে সরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসনের নামে নির্দিষ্ট কলোনীতে আটকে রাখার নীলনঙ্া করা হয়।
আদিবাসীদের নেতৃবৃন্দের অভিমত, 'সরকারের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিলো গারোদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিনষ্ট করা এবং তাদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখা।' গারো আদিবাসীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুনরায় 'জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ'-এর পতাকাতলে একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। 'বাঁচার দাবী' নামে তখন সরকারকে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। অবশেষে গারোদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে বনবিভাগের অপচেষ্টা ভেস্তে যায়। কিন্তু সরকারী খাতের কোটি কোটি টাকা লোটপাট হয়।
৭০ দশকে মধুপুর:
৭০ দশকে মধুপুরের বেশ কয়েকটি আদিবাসী গ্রাম নিশ্চহ হয়। ভারতের লোকসভার সাবেক স্পীকার মিঃ পি.এ সাংমার পৈতৃক ভিটা 'জালালপুর গ্রাম' এখন আদিবাসী শূণ্য হয়ে গেছে, জালালপুর এখন কেবলই স্মৃতি।
সারা বিশ্বের প্রথম গারো আদিবাসী বিশপ পনেন পল কুবি, সিএসসি-এর জন্মস্থান 'দেওয়াচালা; গ্রামেও আর কোন অধিবাসী পরিবার দেখা যায় না। সরকার ফায়ারিং রেঞ্জ করার নামে 'নয়াপাড়া গ্রাম' থেকে শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করে। এক সপ্তাহের নোটিশে তাদের ঘরবাড়ী ছেড়ে চলে যেতে হয়। ২৫০০-৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। উপরন্তু এদের অনেকেই গ্রাম ছাড়ার পরও ১০-১৫টি মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে জেল খাটে। অনেকে সর্বশান্ত হয়। এভাবেই মধুপুরের আদিবাসীদের দিন দিন প্রান্তিক হয়ে পড়েছে।
মধুপুরে রাবার বাগান চাষ:
৮০-এর দশকে শত প্রজাতির প্রাণ-বৈচিত্রে সুশোভিত শালবন উজাড় করে এবং আদিবাসীদের জমিতে (কিছু বাঙালীদের জমিও ছিল) সরকার জোড়পূর্বক রাবার চাষ করে। তখন আদিবাসীরা মধুপুরে রাবার চাষ লাভজনক হবে না কিন্তু আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিপন্ন হবে আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। বনবিভাগের সাথে সংঘর্ষে কিছু আদিবাসী এবং বাঙালী আহত হয়। প্রবল প্রতিরোধের মুখে এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক লেখালেখির কারণে, রাবার চাষে অনেকটা বন্ধ হলেও কিছুটা চাষাবাদ হয়। মূলতঃ তখন থেকেই মধুপুর বনে শালবন কেটে ন্যাড়া করে বিদেশী একক/আগ্রাসী প্রজাতির গাছ লাগানো শুরু করে। সেখানেও কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়। এখন এই রাবার চাষ অলাভজনক হওয়ায় প্রায় এক বছর যাবৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কর্মচারী বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলে শুনা যায়।
৮২ ও ৮৪ সালে গেজেট নোটিফিকেশন এবং আদিবাসীদের স্বপ্নভঙ্গ:
এই একই দশকে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সরকার আদিবাসীদের রেকর্ডভুক্ত সকল উঁচু জমি বন বিভাগের জমি হিসাবে ঘোষণা করে। ১৯৮৪ সালে এই ঘোষণা অনুযায়ী সরকার সব রকমের খাজনা গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। মধুপুরের গারো আদিবাসীরা হারায় ভূমির অধিকার। সেই থেকে তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ চলে আসছে তারা 'জবর দখলকারী' (!)
রেভাঃ ফাঃ হোমরিক, সিএসসি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে তার জমি ফেরত পেলেও গরীব আদিবাসীরা শুধুমাত্র টাকার অভাবে মামলা করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি তাদের নিজেদের জমির উপর অধিকার।
বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবি ব্যাংকের অর্থায়নে মধুপুরে সামাজিক বনায়ন:
বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবি ব্যাংকের অর্থায়নে ৯০ দশকে সরকার যে সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে মূলতঃ তার মাধ্যমেই মধুপুরের শালবন ফোকলা হয়ে পড়ে। নির্বিচারে শালবৃক্ষসহ এর কপিচগুলো কেটে বনবিভাগ উজাড় করে। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কৃত্রিম বন সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করা হয়। বনের ভেতর শত শত প্রজাতির গাছ ধ্বংস করে বিদেশী আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপ্টাস, অ্যাকাশিয়া, মিনজিয়াম গাছ লাগানো হয়। এই বিদেশী প্রজাতির বৈশিষ্ট্য হলো- এগুলোর নীচে ছোট গাছ, লতাগুল্ম জন্মে না। এগুলোর ডালপালা কম। এসব গাছে পাখি বাসা বাঁধে না, এগুলোর ফল পাখিরা খায় না; এমনকি এসব গাছের ডালে পাখি বসে না পর্যন্ত। এসব বাগান থেকে পোকামাকড়, গান্ধি পোকা, ফড়িং প্রভৃতি শস্য ক্ষেতে ব্যাপক হারে যায়। ফলে কৃষকদের অভিযোগ, 'ফলন কমে যাচ্ছে অতিদ্রুত।'
সামাজিক বনায়নের শুরুতে আদিবাসীরা এর প্রতিবাদ করে। কিন্তু আদিবাসীদের বুঝানো হয় প্রকৃতপক্ষে তারাই হবে বনায়নের উপকারভোগী অংশীদার। এও বলা হয় যে, আদিবাসীদেরকে অধিকার ভিত্তিতে বনায়নে সম্পৃক্ত করা হবে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে আদিবাসী তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠী অংশীদার হতে পারেনি। যারা প্রভাবশালী, দূরের রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীরাই মূলতঃ বনবিভাগকে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে অংশীদার হয়। স্থানীয়, হত দরিদ্র যারা ওরা দু'একজন অংশীদার হয়েছিলেন তারা তাদের বনবাগান রক্ষা করতে পারেনি। কারণ, বনবিভাগের অধিকার, নিবেদিত প্রাণ (!) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পটের গাছগুলো রাতের আধাঁরে কখনো কখনো প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি করে দেয়। গরীব মেহনতি মানুষের কপালে মিথ্যা মামলা ছাড়া আর কিছু জোটেনি। (৯৮ সালের ২৮৬৬ জন সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গরীব ও আদিবাসীদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৯৩ জন)।
এছাড়াও, বহিরাগত অংশীদারগণের গারো এলাকায় অবাধ বিচরণে গারোদের বিরুদ্ধে নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এ নিয়ে বহিরাগতদের সাথে সংঘাত মাঝে মাঝে দেখা দেয়। আর অপরদিকে বনবিভাগ একের পর এক আদিবাসীদের মিথ্যে বন নিধনের মামলা রজু করতে থাকে। ৯০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, এমনকি ১.৫ বছরের শিশু পর্যন্ত বাদ যায়নি এদের মিথ্যা মামলা থেকে। ৫টা থেকে শুরু করে শতাধিক মামলা, এমনকি জেলে থাকাবস্থায়ও ১১টি মামলা হয়। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকাকালীন সময়েও মামলা হয় অনেকের। এক আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলের নামেও অর্ধ শতাধিক মামলা হয়। অনেক যুবক মামলা চালানোর টাকার অভাবে গ্রাম ছেড়ে শহরের উদ্দেশ্যে; অনেক আদিবাসী ছাত্র পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমায় ঢাকা শহর কিংবা অজানা উদ্দেশ্যে।
মধুপুরে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম:
সাম্প্রতিক সময়ে মধুপুর আদিবাসী এলাকায় তাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যগত ভাবে বসবাস করে পিতৃভূমিতে ইকো-পার্ক করাকে কেন্দ্র করে বনবিভাগ তথা সরকারের সাথে আদিবাসীদের বিবাদ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আদিবাসীদের দাবী, তারা স্মরণাতীত কাল থেকে এই বনে বাস করে আসছেন। এই বন, জমি, গাছপালা তাদের; তাদের কাছে প্রতিটি গাছ জীবনের চেয়ে প্রিয়। তাদের পিতৃভূমিতে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে, তাদের জীবন-জীবিকা, ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি ধ্বংস করে ইকো-পার্ক করতে দেয়া হবে না। জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা তা প্রতিহত করবেন। মাননীয় বন পরিবেশ মন্ত্রী জনাব শাহজাহান সিরাজকে শুরু থেকেই তারা সতর্ক করে দিয়ে বলে আসছেন, "জোর করে ইকো-পার্ক বাস্তবায়ন করা হলে আপনাকে মন্ত্রীত্ব হারাতে হতে পারে।" ইতোমধ্যেই তিনি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্বও হারিয়েছেন। একে তাদের "নৈতিক বিজয়" বলে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করছেন।
অপরদিকে, বনবিভাগ তথা সরকার বলে আসছেন, যে কোন মূল্যে তারা তা বাস্তবায়ন করবেন। গত ৩রা জানুয়ারী ইকো-পার্ক বন্ধের দারীতে বিক্ষোভ মিছিলে বনকর্মী ও পুলিশের গুলিতে পীরেন স্নাল (২৭) নামে এক আদিবাসী যুবক খুন হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শিশুসহ অর্ধ-শতাধিক নর-নারী। উৎপল নকরেক (২২) নামে এক যুবক পঙ্গু হয়ে গেছেন চিরতরে। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন। আদিবাসীদের দাবী তারা নিরস্ত্র অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলেন। ঘটনার পর আদিবাসী নেতৃবৃন্দের নামে উল্টে মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫টি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১লা জুলাই মাসে মধ্যরাতে বনবিভাগের কর্মচারীদের নেতৃত্বে গায়রা গ্রামে সহস্রাধিক ফলবান কলাগাছ কর্তন করেছে। এখনও জোড় প্রচেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। গ্রামে গ্রামে টহল জোরদার করা হয়েছে।
৬২ সাল থেকেই আদিবাসীরা সেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রানান্তর সংগ্রাম করে চলেছেন। স্বাধীনতার পর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে; আন্দোলনের ধারাতেও পরিবর্তন এসেছে। মৌন মিছিল, সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সমাবেশ, গোল টেবিল বৈঠক, মিছিল, মানব বন্ধন, অনশন, কালো পতাকা উত্তোলন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি পেশ, মামলায় হাজিরা, পাল্টা মামলা, সড়ক অবরোধ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলন করে আসছে। তাদের আন্দোলনে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ দেশের সচেতন আপামর জনগণ শরীক হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র লারমা (সন্তু লারমা), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিঃ সঞ্জীব দ্রং, নাট্যকার ও অভিনেতা জনাব মামুনূর রশীদ, গণ ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্য্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিদ ডঃ কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমপিসহ বিরোধী দলের সংসদীয় কমিটির ৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল আদিবাসী এলাকায় জনসমাবেশ আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেছেন। এছাড়া, গাসু, বাগাছাস, আজিয়াসহ বিভিন্ন আদিবাসী ছাত্র ও যুবক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীগণ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেই চলেছেন।
মধুপুর প্রাণ-বৈচিত্র রক্ষার সাতকাহন:
মধুপুরের প্রাকৃতিক শালবন ধ্বংস করে প্রাণ-বৈচিত্র রক্ষা করা কখনো সম্ভব নয়। অচিরেই তথাকথিত ইকো-পার্কসহ লোটপাতের মেগা-প্রজেক্টগুলো বাতিল করা প্রয়োজন। প্রাণ বৈচিত্র রক্ষার জন্য শুধুমাত্র আন্তরিকতার প্রয়োজন, কোন প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান ঢাকায় সেড কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে বন রক্ষার একটি চমৎকার তথ্য দেন। তিনি বলেন, "আমি জার্মানীতে যাওয়ার সময় মধুপুর থেকে ১ কেজি মাটি নিয়ে গিয়েছিলাম। খালি চোখে কিছু দেখা না গেলেও সেই ১ কেজি মাটি থেকে গবেষণায় পাওয়া যায় ২৫০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছ, লতা-গুল্ম। সেগুলো জার্মিনেটও করেছিল এবং দেখা গেছে প্রত্যেক গাছ সেখানে প্রায় ৩০০টিরও বেশী করেছিল।"
আমার বক্তব্য হলো- যে অঞ্চলের মাটি এত উর্বর, যেখানে এত বেশী প্রাণ-বৈচিত্রের সমাহার সেখানে প্রাকৃতিক বন উজাড় বন উজাড় করে মেকী বন তৈরী করা এত জরুরী কার স্বার্থে ? মধুপুর বনে গাছ লাগানোর কোন প্রয়োজন নেই। মাটি থেকে যে শত প্রজাতির গাছ জন্মাবে তা দেখে-শুনে রাখলে সেখানে এত বেশী বন হবে আগামী ১৫-২০ বছরে ঐ বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা যাবে না।
শেষ কথা:
সারাদেশের আদিবাসী জনগণ সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছেন। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও সাংবিধানিক অধিকার ছাড়া আদিবাসীদের কোন সমস্যা সমাধান হবে না। এগুলো হলেই রাতারাতি সকল সমস্যার সমাধান হবে তাও নয়। তবে শোষণ-বঞ্চনার মাত্রা অনেকখানি কমে আসবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। মানবাধিকার বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনের সুপারিশ অনুযায়ী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৫ সালে থেকে ২০০৪ পর্যন্ত (Resolution 48/63 of 21 December 1993) আদিবাসী দশক হিসাবে ঘোষণা করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার, পরিবেশ, উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত করা।
আদিবাসী দশকের মূলসুর হলো, "আদিবাসী জনগোষ্ঠীঃ কর্মকান্ডে অংশীদারিত্ব।"
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সরকার ১৯৯৩ সাল থেকেই "বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই" বলে অস্বীকার করে আসছেন। এরাই আবার ভোটের আগে তাদের মেনুফেষ্টুতে আদিবাসীদের জন্য অনেকগুলো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও রাখেন। বিরোধী দলে থাকলে আদিবাসী আদিবাসী বলে গলাবাজি করেন, প্রতিবছর ৯ই আগষ্ট আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত 'সংহতি' পত্রিকায় 'আদিবাসী' সম্বোধন করে মনোমুগ্ধকর বাণী লিখেন। ক্ষমতায় গেলে এরাই আবার বলেন, "বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, যারা আছে তারা 'যাযাবার' ও 'উপজাতি'।
এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরী। "অধিকার কেউ কাউকে দেয় না; অধিকার আদায় করে নিতে হয়।" আসুন আমরা সকলে নির্যাতিত আদিবাসী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামিল হই।
আমেরিকার ইন্ডিযান নেতা তিকামশ তার দেশের আদিবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, "সংগ্রাম ছাড়াই কি আমরা নিজেদের ধ্বংস হয়ে যেতে দেবো, ছেড়ে দেবো আমাদের এইসব ঘরবাড়ি, মাতৃভূমি, পরমেশ্বর যা আমাদের একদা দান করেছিলেন অকাতরে ? বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেবো পূর্বপুরুষদের সমাধিক্ষেত্র এবং যা কিছু আমাদের প্রিয় এবং পবিত্র, তার সবই ? আমি জানি তোমরাও আমার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলবে 'কখনো নয়, কদাপিও নয়।"
[I am sorry to let you know, this was the last post in the Facebook! J ja chheyechhe(n) diyechhi. Ami ekhon keboli pathok! Ani chaibo na kew amar ekha porukh. Ami amar jonno likhi. Sorry...............................................................]
Babul D' Nokrek
Writer & Lyricist
Free-lance journalist
Email:bnokrek@yahoo.co.uk
তথ্য সূত্রঃ
০১. সংহতি ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সম্পাদনা- সঞ্জীব দ্রং।
০২. বিপন্ন ভূমিজ-সম্পাদনা- অধ্যাপক মেজবাহ কামাল ও আরিফাতুল কিবরিয়া।
০৩. জাতিসংঘ ও আইএলও কর্তৃক ঘোষিত ঘোষণাপত্র।
০৪. গণতন্ত্র ও সুশাসন এবং আদিবাসীদের অধিকার- সঞ্জীব দ্রং।
০৫. বিপন্ন আদিবাসী- সঞ্জীব দ্রং।
০৬. আদিবাসী জীবনের সুখ-দুঃখ- বাবুল ডি' নকরেক।
০৭. ধর্ষিতা শালবন- বাবুল ডি' নকরেক।
০৮. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীঃ ঘুম নেই আবিমায়- বাবুল ডি' নকরেক।
০৯. শালবন ধর্ষণ- অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক।
১০. জ্যোৎস্না নেই, পূর্ণিমা নেই- সম্পাদনা- বাবুল ডি' নকরেক।
১১. The Last Forest of Madhupur- Philip Gain.
12. Website of United Nations
13. Wikipeadia
No comments:
Post a Comment