Thursday, July 18, 2013

বন্ধন ... (ছোট গল্প)

বন্ধন ... (ছোট গল্প)

May 28, 2013 at 4:10pm
এক ।


এই প্রথম বাপনের মন আর হৃদয়  টা কাঁদছে! খুব কাঁদছে এই কদিন! কোন জায়গা ছেড়ে যেতে গিয়ে মন আর হৃদয় এক সাথে এত কাঁদে না তার। এবার খুব মন টা উথাল-পাথাল করছে। কেনো? সে কারণ খুঁজে পায় না। আসলে মানুষের মন বড় বিচিত্র! কখন কেমন ভাব নেয়, বুঝা বড় দায়।


দুই।

কয়েক মাস ধরেই সে এখানে ওখানে ইন্টারভিউ দিয়ে আসছিলো। গত দুবছর যাবত দেশে যাওয়া হয় না। পড়াশুনা একটা বিষয়। আরো কত বিষয় থাকে মানুষের, বলা যায় না! তারো সে রকম কোন বিষয় আছে হয় ত! হুট করে কয়েক টা ইন্টারভিউর রেজাল্ট তার হাতে! তার মধ্যে দুটো জব সে পছন্দ করেছে। প্রথম টা 'দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট' এর রিপোর্টার আর দ্বিতীয় টা একটা মাল্টি-ন্যাশ্নাল কোম্পানিতে প্রশিক্ষক হওয়ার অফার। প্রথম জব টা পছন্দের খুব কিন্তু রিপোর্টার এর আগে জুনিয়র শব্দটা তার খুব অপছন্দের! আসলে সে ইন্টারভিউ দিয়েছিল সাব-এডিটর (সহ - সম্পাদক)  পদের জন্য। কিন্তু আমেরিকা বলে কথা। তাকে ফোনে জানানো হয়েছে, 'আমেরিকার কোন পত্রিকা সরাসরি কাউকে সহ সম্পাদক করে না! এখানে জুনিয়র, সিনিয়র রিপোর্টার হয়ে পদোন্নতি পেয়েই সহ সম্পাদক, উপ সম্পাদক হতে হয়। আসলে তোমার সিভি তে উল্লেখ ছিলো তুমি সহ - সম্পাদক কোন পত্রিকার! কিন্তু সে টা যে বাংলাদেশের কোন পত্রিকার সে টা আমরা খেয়াল করিনি! স্যরি!'

বাপন জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে জয়েন করছে না এটাই তার সিদ্ধান্ত। তার বন্ধুরা কেউ কেউ দেশে এখন চীফ, ডেপুটি রিপোর্টার। না হয় সিনিয়ন সহ - সম্পাদক! এই জুনিয়র তুনিয়র আর ভালো শোনায় না। তাছাড়া রিপরটিং এ এই দেশে সে খুব ভালো করতে পারবে বলেও তার মনে হয় না। তাই অনেক ভেবে চিন্তে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ, টেকসই জবে যেতে চায় সে। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষক হিসেবে দেশে কাজ করেছে সে। টিচার ত ছিলোই, টিচার ট্রেইনার হিসেবেও অল্প স্বল্প কাজ করেছে। এন জি ও তেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে অল্প দিনের। সব মিলিয়ে ...

তিন।

পহেলা জুন নতুন জব এ জয়েন করছে। ম্যারীল্যান্ড ছেড়ে যাওয়া টা তাই এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা! ৩ তারিখ বোস্টন ইউনিভার্সিটি (ওয়াশিংটন ডিসি ক্যাম্পাস) তে ৩ মাসের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠাচ্ছে তার অফিস। তাই সব কিছু গোছগাছ করছে ধীরে ধীরে আর ভাবছে, 'আমি কি সত্যি এই এজহিল এভেনিউ, ম্যারীল্যান্ড এর এপার্টমেন্ট টা ছেড়ে চলে যাচ্ছি? সত্যি? বাড়ির পাশে ছোট্ট বন, সেখানে ভোরবেলার হাজারো পাখির কলতান কি আমাকে বার বার পেছন ফিরে তাকাবার লোভ দেখাবে না?' ভাবছে আর মনের কোনে মেঘ জমে উঠছে তার...


'কয়েক গজ দূরে জন হোপকিন্স ইউনিভার্সিটি, তার বিশাল লাইব্রেরীর অনুপস্থিতি কি বুকের ভেতর শূণ্যতা তৈরী করবে না?'


বাড়ির সাথে লাগোয়া ইনক প্র্যাট ফ্রী লাইব্রেরীর অভাব কি পূর্ণ হবে কখনো?'  এই সব সে ভাবে আর ভাবে...


সারা আমেরিকায় সে মাত্র একটি কাঁচা রাস্তা আবিস্কার করেছে! সে রাস্তায় মন খারাপ হলে একা হাঁটত আর ভাবত, 'এই ত আমার দেশ, আমার দেশের মাটির গন্ধ!' সে রাস্তাটাও খুব খুব মিস করবে সে খুব, খুব .. .



মিস করবে এখানের স্কুল পড়ুয়া পিচ্চি পিচ্ছি ছেলে মেয়েদের যারা তাকে নাম ধরে ডাকতে না পেরে 'বব' বলে ডাকত তাকে! যাদের দেখে সে ভাবত 'এই ত আমার ছেলে-মেয়ে আমার চোখের সামনে!' যাদের খাবার কেনার দুই এক পয়সা কম পড়লে 'ডোন্ট অরি! আই এ্যাম হিয়ার' বলতে পারত...


চার।

বাপন ১ জুন যোগ দিচ্ছে নতুন কাজে। ৩ জুন থেকে প্রায় ৩ মাসের নিবিড় প্রশিক্ষণে (ইন্টেন্সিভ ট্রেইনিং) এ যাচ্ছে। অফিস চাইছে, তার আর কি করার!  


এখানে ৩০ মে শেষ ডিউটি তার । সেদিন ঐ পিচ্চিদের সাথে শেষ দেখা হবে। বড়রা তো প্রতিদিন ই বিদায় বলে ফেলছে, 'উই উইল মিস ইউ BAP ' বলে...


পিচ্চিরাও কি এমন বলবে?


এর আগে সে কত জায়গায় গেছে, কাজ করেছে। কিন্তু এমন বন্ধন এর আগে সে বোধ বা অনুভব করেনি! সে চলে যাবে এই কথা শুনে সে কোনদিন কাউকে কাঁদতে দেখেনি! অবশ্য তার বউ কোথাও দুই এক সপ্তাহের জন্য যাওয়ার আগে চোখ মুছে... এখানেই প্রথম দেখেছে দুই একজন কে কাঁদতে। ওরা তার সাথে ঘনিস্টও নয়। দীপা নামের যে ইন্ডিয়ান মেয়েটা তার সাথে কাজ করত, তার সে কি কান্না! এগুলো রক্তের বন্ধনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে কখনো কখনো...


পাঁচ।

আজ কাজ ছিলো না তার। খুব বিজি থাকায় তবুও তার ডাক পড়ে ২ ঘন্টার জন্য। ফ্রেড নামের একজন ৮-৯ বছরের একটা ছেলে আর ১১ বছরের ক্যাথি নামের একটা মেয়ে আসলো...


ছেলে টা বলল,

- Bob! Are you leaving Us?
- Yes, I am...
- Why? Why Bob? Where are you going? Why Bob?
- Leaving for DC to join a new job boy...
- Common Bob! No, Please say 'no'! We will miss you Bob
- Why you will? We are neither friends nor relatives!
- You are! You are Bob! I love you, I love you  বলে ছেলে টা তাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদল...


ফ্রেড  বলল...

- বব, আমার যদি টাকা থাক ত আমি তোমাকে একটা সিনেমার ভিডিও সিডি কিনে দিতাম!'
- তুমি এই যে বললে, আমি পেয়ে গেছি। মুভি টার নাম বল...
- Tropic Thunder! তুমি অবশ্যি দেখবে মুভি টা। আমি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তোমাকে কিনে পাঠাবো!
- ঠিক আছে। আমি দেখে নেব...
- বব, তুমি তোমার ঠিকানা দিয়ে যাবে? আমি মুভি টা তোমাকে পাঠিয়ে দেবো ঠিক ঠিক একদিন...

এই বলে ছেলেটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে...

ক্যাথি নামের মেয়েটা বলল...

- Bob, could you remember? One day you offered Fred a pizza? He didn't have even a single dollar on that day! Both of us were so hungry. You didn't give me though!
- Oh! Really? Am sorry! I can't recollect....
- It's okay!!  I appreciate, you fed my friend one day!
- Thanks
- Bob, we were good friends. You deserve a very sincere hug from me....

(আমেরিকায় বাচ্চা মেয়েদের hug তো দূরের কথা, ছুঁয়াও বিধি/ আইন বহির্ভূত! কিন্তু ক্যাথি কি তা বুঝে? না বাপন বুঝে!)


ক্যাথির কান্না থামে না। কোথায় যেনো এদের অলিখিত বন্ধন! এ বন্ধন না রক্তের, না আত্মীয়তার। এ বন্ধন কোন সুতোয় বুনা নয়, এই বন্ধন প্রাকৃতিক শাদা চোখে দেখা মুশকিল...  



ছয়।

বাপনের তিন মেয়ে। মেজো মেয়ের বয়স ক্যাথির সমান হবে বোধ করি। ওর মনে হল এ যেনো ক্যাথি নয়। এই মেয়েটি তার  তিন মেয়ে! তার তিন কন্যা তাকে জড়িয়ে ধরে  কাঁদছে...


সাত ।

বাপন যেনো বহুদিন পর আবার মন খুলে মনে মনে কাঁদল এমন... বহুদিন পর...
এ কান্না হৃদয় বিদীর্ণ করে দেয়। এ কান্না দেখা যায় না, শুধুই অনুভব করা যায়...  

গহনা...

গহনা...

July 18, 2013 at 5:01pm
মানুষের নাম গহনা! ধুর ...
শুনেই ক্যামন ক্যামন লাগে...


শৈশবে ঐ নাম শুনে শুনে যৌবনে পা রাখি,
হিদয়ে বাসনা পুষি, দেখা হবে একদিন!


সেই একদিন আর আসেনি জীবনে;
গহনা অধরা, না দেখা নারী,
আকাশের নিলিমা দেখি, অপরূপ
রূপের সন্ধান করিনি কখনো,
গহনার অরূপ রূপের সন্ধান করেই
জীবন আমার আধা পার!

আকাশ ভেঙে জোছনা পড়ে
জোছনার জলে ভিজে ছোপ ছোপ
হিদয়ে উত্তাপ ছড়ায়,
উত্তাপ বাড়ে দেহ মনে,

ক্রিং ক্রিং ক্রিং...

- হ্যালো, মেঘ?
- হুম, কে বলছেন?
- আমি, আমি গহনা...

সেলফোন টা হাত থেকে পড়ে গিয়ে
দম হারালো...

ঘুম ভেঙে গেলে দেখি
রিয়েল গহনা আমার বুকে!

ভালো আছিস তুই?

ভালো আছিস তুই?


আমি ঐ মেয়ের দিকে ভালো করেই কখনো
তাকিয়ে দেখিনি! ভালো লাগে কি লাগে না
বলতে পারবো না! কি জানি ও দেখতে কেমন?
মনে মনে, হিদয়ে হিদয়ে কথা বলেই যৌবনে
পা রাখি। আহ! সুতপা! নামটা শুনেই দিল ঠাণ্ডা!

সুতপাকে ভালোবাসি কি না ঠাহর করতে পারিনি
সুতপা-ই একদিন বললে, 'এই মেঘ, তুই কি
আমায় ভালোবাসিস?' 'তোর ভালোবাসার গুষ্টি
কিলাই! আমাকে ছাড়া কাউকেই ভালোবাসি না আমি!'

সে কথা না ছিল মনে, না হিদয়ের...

সুতপা, আমার সুতপা, রাগে অভিমানে হয় ত
দূরেই চলে গেল! আর ফিরে এলো না...

কখনো, কোনদিন ...


সুতপা, আমি নিলাকাশ ভালোবাসি
ঘাস - ফুল - নদী-জোছনা ভালোবাসি

ভালোবাসি তোমাকেও

                      কেমন আছিস তুই?