Thursday, June 13, 2013

An Eclusive Interview of the Architect of Modern Abima in Bangladesh!




was shortened and published in the Souvenir of "The 100 Years Jubilee" of the Garos in becoming Christan in Bangladesh!


বানঃ যীশুনা রাসং ফাদার। আপনি কেমন আছেন?

ফাঃহোঃ  যীশুনা রাসং। ভাল আছি তবে অ-নে-ক ব্যস্ত, অনেক কাজ। তোমরা কেমন আছ? ভালো আছ?


বানঃ আমরাও ভালো আছি ফাদার।


বানঃ সুদীর্ঘ প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে আপনি মান্দিদের মধ্যে আছেন । বলা চলে জীবনের পুরো সময় ওদের মধ্যে যাপন করলেন ।  আপনার মধ্যে কি কোনো আফসোস বা দুঃখবোধ কাজ করে? নাকি আপনি মনে করেন আপনার জীবন স্বার্থক মান্দিদের মধ্যে থাকতে পেরে?


ফাঃহোঃ না, আমার মধ্যে কোনো আফসোস বা দুঃখবোধ কাজ করে না। আমি মনে করি আমার জীবন স্বার্থক মান্দিদের মধ্যে থাকতে পেরে। আমি এখানে ১৯৫৯ সাল থেকে কাজ করতেছি। আর্চ বিশপ গ্রেনার আমাকে বলেছেন, ‘‘আমি তোমাকে জঙ্গলে পাঠাইবো। সেখানে খুব ঘাওরা মান্দি জাত আছে। ফাদার স্টিফেন ওখানে প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করতেছেন।” মাত্র আড়াই হাজার ক্যাথলিক ছিল এ জঙ্গলে। আমি প্রথমে প্রাইমারী স্কুল খুলেছি এবং ছেলে-মেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না। রসি দিয়ে স্কুল বেঞ্চে বানছি। তারপর আসতে আসতে মান্দি শিক্ষক-শিক্ষিকারা পালকীয় ও স্কুলের কাজ করেছে। আমার ট্রেনিং ছিল ‘উন্নয়ন কাজ’-এ। উন্নয়ন কাজ শিখলাম ঈড়ড়ৎ ঞযব ওহংঃরঃঁঃব, ঈধহধফধ, টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঞযড়সংড়হ, টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঋষড়ৎরফধ, ইড়ষফরিহ ঈড়ষষবমব, এবড়ৎমরধ থেকে। তারপর এখানে উন্নয়ন কাজ শুরু করলাম। আমি আমি প্রথমে জলছত্র গ্রামে আসি। গ্রামের মধ্যে কোন পায়খানা ছিল না। তারপর কুয়ার পানি পান করেছি। আমার আমাশা তামাশা হয়েছে। একেবারে অসম্ভব। একটি এজিএম ছিল জল সিদ্ধ করতে হবে গ্রামে। গায়রা-টেলকি গ্রামে গেলাম, সেখানে একজন আচ্চু গ্লাসে করে আমার জন্য পানি নিয়ে আসলো। সেখানে মশার বাচ্ছা ছিলো। আমি আচ্চুকে জিজ্ঞেস করলামঃ আচ্চু জল সিদ্ধ করেছ? আচ্চু বললঃ হ্যাঁ করেছি। আমি বললাম আবার কর। রাত্রিতে আচ্চু আমাকে কুয়ার কাছে নিয়ে গেল। তারপর সেখানে পেং পোং.. পেং পোং মানে ব্যাঙ ছিল সেখানে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আচ্চু ব্যাঙ এর পায়খানা তোমরা খাইতেছ। আচ্চু বলল, হ্যাঁ খুব ভাল লাগে। তারপর আসতে আসতে টিউবয়েলের কাজ করছি। প্রত্যেক বাড়িতে এখন টিউবেল ও পায়খানা আছে। বক্রক্রিমি ছিল। এখন তারা পায়ে সেন্ডেল পড়ে। স্বাস্থ্য এখন খুব ভাল। দেখে খুব ভাল লাগে। তারপর স্কুল আমরা ঠিক করেছি। জলছত্র হাই স্কুল খুলেছি। প্রথমে জুনিয়র হাই স্কুল।


বানঃ কত সালে হাই স্কুল খুলেন?


ফাহোঃ ১৯৫৯ সালে বোধ হয়। মানে, আসতে আসতে হাই স্কুল করলাম ১৯৮০ সাল। তারপর পীরগাছায় স্কুল খুলছি পরেশ বাবুকে দিয়া। প্রথমে  ক্লাশ এইট পর্যন্ত ছিল। তারপর আসতে আসতে আপগ্রেড করলাম। এখন এখানে রেজাল্ট খুব ভাল। আমরা জানি যদি শিক্ষিত মান্দি না হয় তাহলে কিচ্ছু ঠিক হবে না। ১৯৮৯ সালে বিশপ আমাকে বলেন, “পীরগাছায় মিশন খোল।” আমি পীরগাছায় মিশন স্থাপন করলাম। এখন আমাদের মিশনে প্রায় আট হাজার ক্যাথলিক আছে। আর জলছত্র ছয় হাজারের মত আছে।


বানঃ এখানে খ্রীষ্টভক্তের সংখ্যা বেশি?


ফাহো ঃ হ্যা, এখানে বেশি। প্রতি বছরই আমরা মাথা গুনতি করি। মান্দি এখন শিক্ষিত, চাকরি পাইতেছে শিক্ষিত অনুসারে। তারা যদি চেষ্টা করে তাহলে উকিল, ডাক্তার, ইনজিনিয়ার, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশায় যোগদান করতে পারবে। সবাই মান্দিদেরকে বিশ্বাস করে এবং তাদেরকে কাজ দিতে চায়, কারণ তারা যড়হবংঃ, তারা চুরি করে না। কেউ চুরি করলে সমাজ সহ্য করে না। মান্দি জাত খুব আশ্চর্য! তাদের বিবেক ভালো, ঢ়বৎংড়হধষরঃু ভাল।


মনে রাখতে হবে, এটা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। এবং মাতৃতান্ত্রিক হিসেবে মেয়েরা পবিত্র জীবন যাপন করে। পরিবার, ছেলে-মেয়েদেরকে ভালমত দেখাশুনা করে, স্নেহ করে ও যতœ করে। উন্নয়নের কারণে মান্দিদের জীবন যাপন এখন অন্য রকম হয়তেছে। তারা বিভিন্ন সব জায়গায় যাইতেচ্ছে। প্রায়... অনেক মান্দি গার্মেন্টস যাইতেছে আবার অনেকে বিউটি পার্লারে কাজ করতেছে। 


বানঃ কে কোথায়? কি করছেন? এবং কত জন আছেন সেটা বলতে পারবেন কি?


ফাহোঃ আমার মিশনে গার্মেন্টসে ১১৮ জন, পার্লারে ৫২৮ জন, হাউজে কাজ করে ১১৩ জন, নার্স ৪৯ জন, বিভিন্ন এনজিও গুলোতে ২০৮ জন, সিকিউরিটি গার্ড ৯২ জন, রাইসমিলে ১২ জন, আর্মি ১ জন, টিচার ৫৯০ জন, হোটেলে ১৪ জন, কৃষক ৩২ জন, ড্রাইভিং ৬০ জন, কারখানায় ১৩৫ জন কাজ করে।


বানঃ আপনি কি মনে করেন মান্দিরা এখন কৃষি কাজ করছে না বা  তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে?


ফাহোঃ মান্দিরা এখন কৃষি কাজ করতে চায় না। এটা দুঃখের বিষয়। তবে শিক্ষিত হিসেবে এস এস সি ৪৬০ জন, এইচ এস সি ২৬৩ জন, বিএ ৭২ জন, এম এ ১৮ জন, পিটিআই ৫৩ জন, ডাক্তার ২ জন, এমএড ২ জন, এলএলবি ও এলএলএম ১ জন, এগ্রিকালচার ২ জন, কারিতাস ট্রেনিং পেয়েছে যশোহরে ছেলে ৮ জন, মেয়ে ১৪ জন। মান্দি এখন শিক্ষিত। এখন এখানে শেখেরা আরো তিনটি নতুন হাই স্কুল খুলেছে- কেজাই-লাঙল ভাঙ্গা, নালীখালি ও ধরাটিতে। তারা মান্দি ছাত্র চায় কিন্তু তারা ক্লাশে ধর্ম শিখায় না তারা । আমাদের বোর্ডিং-এ মেয়ে ১৪০ জন ও ছেলে ৮৩ জন রয়েছে। মান্দিরা এখন অনেক শিক্ষিত, তবে মান্দিদের আরো শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। আরো প্রফেশনাল শিক্ষা দরকার। তা না হলে তারা বাঁচতে পারবে না।


 


বানঃ মধুুপুরে, মানে আবিমায় কত সালে আপনি আসেন?


ফাহোঃ এখানে ১৯৫৯ সালে আমি মধুপুর আবিমায় আসি।


বানঃ আপনি কি এর আগেও এখানে বেড়াতে এসেছিলেন?


ফাহোঃ নাহ্। আমি কিছুই জানতাম না এখানকার মান্দিদের সর্ম্পকে। আমি প্রথমে বিড়ইডাকুনী মিশনে ৯ মাস ছিলাম। তারপর ময়মনসিংহে ৩ মাস। এরপরেই এখানে আসি। আর্চ বিশপ আমাকে এখানে পাঠাইসেন।  


বানঃ সে  সময়ে বিড়ইডাকুনী মিশনে মান্দিদের অবস্থা কেমন ছিল?                                                              


ফাহোঃ খুব খারাপ। তারা অশিক্ষিত ছিলো। ময়লা অবস্থায় থাকতো। আমি পশ্চিম সাইডে কাজ করেছি। স্নান করতো না। অবস্থা ছিল অসম্ভব রকম, অশিক্ষিত। বিড়ই স্কুল থাকলেও তারা স্কুলে আসতে চায় তো না। তারা বলেছে যদি আমরা স্কুলে এসে শিক্ষা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মান্দিদের বিশ্বাস বা আদিবাসীর সাংসারেক নষ্ট হবে। আসলে এটা ঠিকই। শিক্ষিত হওয়ার পর তারা খ্রীষ্টান হয়েছে। কেউ কেউ ব্যাপ্টিস্ট, কেউ অক্্রফোর্ড, আবার কেউ ক্যাথলিক। ক্যাথলিক পওে আসছে। মান্দিরা এখন অনেক শিক্ষিত যা ভাবতে আশ্চর্য্য লাগে! কত কম সময়ে তারা শিক্ষিত হয়েছে আশ্চর্য।


বান ঃ সে সময়ে বিড়ইডাকুনী ও মধুপুরের অবস্থা কি একই ছিলো?


ফাহোঃ না, না! এখানে মান্দিদের অবস্থা একেবারে পিছনে ছিল। বিড়ই-এ হাই স্কুল অনেক আগে থেকে ছিল্। কিন্তু এখানে মান্দি একেবারে অশিক্ষিত ছিলো। বিড়ইডাকুনীর স্কুল হলিক্রস ফাদার, ব্রাদার ও সিস্টারেরা পরিচালনা করতো। তাই তুলনামূলক ওরা একটু ভালো ছিলো।


বানঃ বনের সাথে মান্দিদের সম্পর্কের কথা কিছু বলবেন কি?


ফাহোঃ এখানে বন ছিল সব জায়গায়। ফরেস্ট ডির্পাটমেন্ট সব নষ্ট করে ফেলছে। এখানে খুব ঈড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ আছে। গত বছরে ডিসপেন্সারিতে ফরেস্ট ডির্পাটমেন্টর কর্মকর্তা আমার সামনের চেয়ারে বসেছে। আমি তাকে বললাম তুমি একটা পাঁকা চোর । চীপ কনজারভেটর অব ফরেস্ট গণি সাহেব আমার সামনে, আমার কথাতে সে মাথানত করেছে এবং পরের দিন তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেফতার হয়সে। তাঁর বিছানায়, তোষকের নীচে, চালের মধ্যে সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা, হীরা পাওয়া গেছে...(অনেক হাসলেন ফাদার)। তিনি সব বন শেষ করসেন। এখন আই, প্যাক আসতেছে। ফরেস্ট ডির্পাটমেন্টের সাথে কাজ করলে তারা আরো চুরি করবে। দিনে গরীব, আর রাতে গাছ চুরি করে তারা বড় লোক। গাছ নাই, বন শেষ। সরকার সব সময় এখানে পরিকল্পনা করতেছে। এখানে ন্যাশনাল পার্ক, ইকোপার্ক স্থাপন করবে এবং মান্দিদেরকে গুচ্ছগ্রামে পাঠনোর চেষ্টা করেছে বার বার। এখানে একবার চা বাগানের মালিক এসেছিল । তিনি আমাকে বলছেনঃ আমরা সব মান্দি চা বাগানে নিব। তোমার সিদ্ধান্ত কি? আমি বললামঃ কোন লাভ নেই। আপনি পিছনে তাকিয়ে দেখেন, এখানে অনেক ক্ষেত মজুর আছে। তারা তোমার মাথা কাটতে চায়! তখন তিনি বললেনঃ আমার সিকিউরিটি কই, আমার সিকিউরিটি কই? তারপর দিন থেকে  সে চাকরি রিজাইন করেছে। তারপর থেকে চা বাগানে মান্দি নেয় নাই। একটার পর একটা, একটার পর একটা ষড়যন্ত্র।


বানঃ ফাঃ কত সালে মান্দিদের চা বাগানে নিতে চাইলো?


ফাহোঃ এটা ছিল  যুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে সম্ভবত। বন উন্নয়নের জন্য এখানে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে “অংরধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ইধহশ” কিন্তু কোন উন্নয়ন হয় নি। এখন কোন বন নাই, শেষ। বন সব শেষ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় এখন এখানে প্রত্যেক রাতে ডাকাতি হচ্ছে। গত সপ্তাহে দুই জন মান্দিকে গ্রেপ্তার করে সব জিনিস নিয়ে গেছে।


বানঃ এখানে পুলিশ পাহারা দেয় না?


ফাহোঃ এখানে পুলিশ, ওখানে পুলিশ, মাঝখানে ডাকাতি। পুলিশ পাহারা দিলেও তারা আংশীদার হিসেবে কাজ করে!


বানঃ মান্দিরা বেশির ভাগই ছিল সাংসারেক, তাদের অবস্থা কেমন ছিল এবং এদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?


ফাহোঃ মানে সাংসারেক ধর্ম, মান্দি ধর্ম । তারা অসুুস্থের সময়  পূঁজা করেছে। যেমন রোগী মরে গেছে। সব আত্মীয় স্বজন পেট ভরা খাইছে। আর অসুখে মারা গেছে। আমি ও সিস্টার তাদের জন্য ঔষধ দিতে চেষ্টা করলাম। এখাানে রোগীদের জন্য আশ্রম আছে। গত বছর ৩৬১ জন সাপ কাটা রোগীকে চিকিৎসা করলাম। তারপর শিক্ষার মাধ্যমে গ্রামের মানুষ রোগী হলে পরিস্কার ভাবে করে থাকে। কারণ ওর্য়াল্ড ভিশনের মাধ্যমে ট্রেনিং পেয়েছে এবং কারিতাস মানুষদেরকে চাকরি দিয়ে দিয়েছে। এখানে মান্দিদের সাস্থ্য খুব ভালো। বছরে দুইবার আমরা হোস্টেলের ছেলে-মেয়েদের জন্য ক্রিমির ঔষধ দেয়। তাদের সাইজ দেখি কত লম্বা এবং কত ওজন বারে। আর্শ্চয্য এখন মান্দিদের সাইজটা। শুধু সাইজটা না, এখন তাদের বুদ্ধি বারতেছে এবং মান্দিরা অনেক শিক্ষিত হচ্ছে। তারা এখন স্বাধীন। নিজের দাবী নিয়ে সংগ্রাম করে এখন তারা। ভালো দিক হলো তারা নিজের কৃষ্টি অনুসারে জীবন যাপন করতে পারছে।


বানঃ বাঙালিরা কত সালের দিকে আবিমার বনে প্রবেশ করে এবং কিভাবে?


ফাহোঃ আগস্ট যখন সরকার কাকরাইদে র্ফাম খুলছেন তখন মান্দিদের জমি সব নিয়ে গেছে বিশেষ করে গাছাবাড়ী এবং আমলীতলা। মান্দিদের জমি নিয়েছে, মান্দিদের বার করেছে। তারপর বাঙালি কৃষক ও র্ফামটাকে আমলীতায় আনছে। এভাবে মান্দি এখান থেকে চলে গেছে। আমার উপস্থিতিতে মান্দিরা তিনবার ইন্ডিয়াতে চলে গেছে। প্রথমে ১৯৪২ সালে, ১৯৬৯ সালে (যুদ্ধের সময়) এখানে আমরা খুব লড়াই করেছি পাল্লা ও কুইছা কালি। একবার সুলেস্টার মাস্টার সব বাঙালীদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তার হাতে কুইছা কালি ঢুকছে। ১৯৭১ সালে তিনজন মান্দি খুন করেছে। আবার ১৯৭৫ সালে মান্দিদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক মান্দি বারবার ইন্ডিয়াাতে চলে গেছে। অনেকে থেকে গেছে আবার অনেকে ফিরে এসেছে। যে একজন ফিরে এসেছে তার হাতে জামির কাগজ ছিল।


বানঃ যে তিন জন খুন হয়েছে তারা কোন কোন গ্রামের ছিল?


ফাহোঃ একজন পীরগাছার আদ, থানারবাইদের ফাদার টিমটিম এবং গজারীছালার বা দরগাছালার একজন মান্দি। আর্মি তাদের গুলি করে খুন করেছে।


 


বানঃ আপনার দেখা মতে, মান্দিদের ভালো দিকগুলো কী কী? এবং কিভাবে?


ফাহোঃ মান্দিরা খুব ভাল। তারা চুরি করে না। মান্দিদের বিবেক আছে। মান্দিদের বিবেক আর আমাদের বিবেকের মধ্যে বেশকম। কারণ তাদের ঈশ্বরের চোখ আছে। ঈশ্বরের বিবেক তাদের মধ্যে কাজ করে। কোন মান্দি চুরি করে না যদি চুরি করে তাহলে অস্বাভাবিক। আমি যখন জয়নাগাছায় আসলাম তখন দুইজন মান্দি গরু চুরি করেছে। বিচার হয়ে গেছে এবং খুন করেছে। এটা খুব ভাল বিচার হয়েছে। মান্দিরা চুরি করে না এবং এটা সহ্য করতে পারে না।


বানঃ এখন অনেক মান্দিদের জমি নেই। যুবক-যুবতীরা শহরে যাচ্ছে কাজের খোঁজে, এটি বাস্তবতা। প্রচুর সংখ্যক যুবতী মেয়ে শহরে বিউটি পার্লারে কাজ করছে। ওদের জন্য আপনার উপদেশ কী?


ফাহোঃ মানে এটা তাদের দোষ না কারণ পিতা মাতা তাদের সব জমি শেষ করে ফেলেছে। এখানে যদি স্রাদ্দ বা বিবাহ হয় তাহলে তারা সব জমি জামা বিত্রিƒ করে খায়। যার কারণে তাদের ঋণ হয়। ঋণ হয় মানে জমি সব শেষ হওয়া। আমাদের ছেলে-মেয়ে ঋণদান সমিতির মাধ্যমে শহরে যাচ্ছে এবং তারা টাকা সঞ্চয় করছে। ছেলে-মেয়েরা টাকা সঞ্চয় করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই টাকা দিয়ে পিতা মাতারা শেখদের হাত থেকে বন্দকী জমি-জমা উদ্ধার করছে। ঢাকা গারো ক্রেডিট ইউনিয়ন এটা খুব ভাল। খুব ভালো চলছে ঐ সমিতি। আমি প্রতিদিন বাপ্তিসমনের সার্টিফিকেট লিখছি। তারা এখন সঞ্চয় করে। আমাদের এখানেও ঋণদান সমিতি আছে। মান্দিদের জন্য আমার উপদেশ হল তোমরা সঞ্চয় কর এবং জমি উদ্ধার কর।


মান্দি মূল্যেেবাধ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে আপনার বক্তব্য ছাপাতে চাই?


ফাহোঃ আমার মতে কৃষ্টি হিসেবে মান্দিরা ঐড়হবংঃ। তারা চুরি করে না। মান্দি বিবেক আমাদের বিবেকের মধ্যে বেসকম আছে। আমি আগেই বলেছি তাদের মধ্যে ঈশ্বরের চোখ আছে (ওংড়ষ গঁমৎড়হ)। ঈশ্বরের উপস্থিতি সব সময় তাদের মধ্যে বিদ্যমান। এ কারণে মান্দিদের কৃষ্টি খুব পবিত্র।


বানঃ ভবিষ্যতে আবিমার মান্দিদের অবস্থা কেমন হতে পারে? আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পর?


ফাহোঃ এখানে তারা থাকবে না। শহরে যাচ্ছে চাকরি করার জন্য এবং যদি সঞ্চয় করে তাহলে তারা  ঋণ শেষ  করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। শিক্ষা হলো আসল জিনিস। যদি শিক্ষিত হয় তাহলে নিজের পায়ে তারা দাঁড়াতে পারবে। নিজের বিবেক, কৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক জীবনেও তারা উন্নতি করতে পারবে। এখন এখানে ভাল খ্রীষ্টান আছে। আমাদের ক্যাথলিক মন্ডলীতে আদিবাসীরা সব চাইতে বেশি। আমাদের ধর্মপ্রদেশে ৮০ হাজার ক্যাথলিক আছে। পীরগাছা মিশনে ৮০০০ হাজার ক্যাথলিক। এখন তারা নিজেরা সব কাজ করে। কারিতাস, শিক্ষক- শিক্ষিকায় তারা কাজ করতেছে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াইতেছে। তার মূলকারণ হলো অর্থনৈতিক বিষয়। শিক্ষিত মানুষ আরো প্রয়োজন। কারণ শিক্ষিত মানুষ বেশি দিন বাঁচে। তাদেরকে হতে হবে প্রফেশনাল শিক্ষা দরকার। ডাক্তার, উকিল ইত্যাদি।


বানঃ আমাদের মন্ডলী বা চার্চ মান্দিদের জন্য আরও কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?


ফাহোঃ ধর্ম যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে মান্দি ঞযবড়ষড়মু প্রয়োজন। এটা তারা করে না। বনানীতে গিয়ে বাঙালী ঞযবড়ষড়মু বা ইংরেজী ঞযবড়ষড়মু পায় বিদেশী ভাষায়। মান্দি মূল্যবোধ বা কৃষ্টি কি সেটা আমরা পায় না। বনানীতে মান্দি ধর্ম বিষযক, কৃষ্টি বিষয়ক কোন গ্রন্থ আছে? নাই। এটা মান্দিদের, মান্দি কি জন্য, মূল্যবান আছে। কেননা কৃষ্টি থেকে আমরা সেই মূল্যবোধ পায়। এটা কি বাঙালীরা বোঝবে, বিদেশীরা বোঝবে। না বোঝবেনা। মান্দি ধর্ম, মান্দি কৃষ্টি ও মান্দি মূল্যবোধ কি? বনানীতে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম মান্দি বিষয়ক কোন  ঞযবড়ষড়মু আছে কিনা। অনেকে কৃষ্টি সম্পর্কে শিক্ষা দিচ্ছে।


বানঃ আপনি বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মান্দি সংস্কৃতির সৌন্দর্য হলো মাতৃসুত্রীয় ব্যবস্থা বা সমাজে নারীর সম্মানের বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন?


ফাহোঃ মান্দি মূল্যবোধ কি? তোমার মার কাছ থেকে শিখেছ মান্দি মূল্যবোধ। মায়ের শাসনে, ধর্মে ও বুুকের দুধ খেয়ে মান্দি কৃষ্টি পেয়েছ। সেটা রাখতে চেষ্টা করবে। অনেকে বলবে না এটা বাংলাদেশী। মুসলমান ধর্মের অনুসারি। পুরুষ শাসিত সমাজ। এখন মুসলমান মেয়ে যখন আমাদের সমাজ দেখে তখন তারা বলে; এটা আমাদের জন্য প্রয়োজন। মেয়েদের বুদ্ধি আছে। মেয়েদের নৈতিক জীবন খুব পবিত্র।


বানঃ মধুপুুরের বন বা আবিমার বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বন উজাড়ের জন্য কাদেরকে দায়ী করেন?


ফাহোঃ বাঙাল বন চুরি করে আর মান্দিদের দোষারূপ করে। এখন ৬০০০ হাজার কেশ চলতাছে র্কোটে। মান্দিদের বিরুদ্ধে ১৫০০শ নিত্য কেশ আছে । এটা শুধু পীরগাছা মিশনে। এটা ভাবতে অসম্ভব লাগে। এখানে অশান্তির মাধ্যমে জীবন যাপন করছে। কেশ চালানোর জন্য আমরা হলিক্রস ও মেরিনল ফাদারদের কাছ থেকে টাকা পায়। এখানে আমরা জানি যে কে চুরি করেতেছে। প্রত্যেক রাতে গাড়ী যাচ্ছে এবং ফরেষ্ট অফিসার সাথে সাথে যাচ্ছে। তারা গাছ বিত্রিু করে কারণ তাদের বেতন খুব কম। জঙ্গলে যদি যাও তাহলে দেখবে গাছ কাটতেছে। এখানে ফরেষ্ট ডির্পাটমেন্ট খুব খারাপ। সবাই জানে। শুধু এখানে না, সিলেট ও চট্রগ্রামের বন শেষ কেন না তার পিছনে ফরেষ্ট ডির্পাটমেন্ট আছে। এখানে জমির বিরুদ্ধে আমার কেশ আছে। ৮০,০০০ হাজার টাকা নষ্ট করলাম র্কোটে। মান্দি এখানে অনেক বছর। এই জমি যার তার জন্ম ছিল ১৮৯০ সালে। একদিন ফরেষ্ট অফিসার এসে খুব কান্না-কাটি করেছে। সে জামালপুরের প্রফেসর ছিল। ফাদার আমি এখন পাপীদের জীবনে প্রবেশ করলাম। আমি বন উন্নয়নের জন্য কাজ করি আর চুরি করি। আমি বললাম; ভালো কাজ কর। অন্ধকারের মধ্যে একটা মোমবাতি জ্বালাও। যদি বন রক্ষা করতে পার তাহলে অন্ধকার শেষ হয়ে যাবে।


বানঃ বর্তমানে মান্দি সমাজের কাছে আপনার আর কী প্রত্যাশা আছে? মান্দিদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?


ফাহোঃ মান্দি সমাজ মান্দিরাই পরিচালনা করবে; কোন বাঙালী নয়। মান্দি সমাজে যে মূল্যবোধ আছে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে এবং ছেলে-মেয়েদেরকে ছোট কাল থেকে সে মূল্যবোধ সম্পর্কে  শিক্ষা দিবে। মিথ্যা কথা বলবে না, চুরি করবে না, মাতৃতান্ত্রিক হিসেবে মাকে ভালবাসবে ইত্যাদি। নিজের কৃষ্টি, ধর্ম সব রক্ষা করবে। ভবিষ্যতেও আমাদের সেভাবে থাকতে হবে, চলতে হবে।  অনেক বাঙালী আসে, আর বলে মাতৃতান্ত্রিক শেষ করতে হবে। ব্যাপ্তিস্ট-রাও এটা করে থাকে। ১৯০০ সালের বিরিশিরির একটা বই আমার কাছে আছে । এখানে উল্লেখ করা আছে ব্যাপ্তিস্টরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ নষ্ট করতে চেয়েছিল।


মান্দিরা শিক্ষিত হচ্ছে আর নিজেদেও স্কুল নিজেরা চালাইতেছে। প্রাইমারী স্কুল চালাইতেছে, হাই স্কুল চালাইতেছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এখন অনেকে এনজিওর-মত কওে বেতন চাইতেছে কিন্তু পাইতেছে না। আমাদের এখানে ২৪ জন শিক্ষকের বিশপ কোন  জন্য বেতন দেয় না। কিন্তু এই শিক্ষকেরাই ক্যাথলিক মন্ডলী চালাইতেছে। তাদের জন্য ভাল বেতন দেয়া দরকার। তারা স্কুল, কলেজে ময়মনসিংহে, ঢাকায় ছেলে -মেয়ে পড়াইতেছে। মাত্র ১৫শ টাকা বেতনে তারা অনেক কষ্ট করে কাজ ক“, ছেলে-মেয়ে মানুষ করে, অন্যের ছেলে-মেয়ে মানুষ করতেছে। ১৫শ টাকায় তুমি বাঁচতে পার? চলতে পার? অসম্ভব।


বানঃ তারা কষ্ট করে বলেই তো সমাজ চলছে, সংসার চলছে, সংস্কৃতি টিকে আছে, টিকে আছে ক্যাথলিক মন্ডলী.. ...


ফাহোঃ অ..স..ম্ভ..ব। তুমি ঠিক্ বলসো। অসম্ভব..তবে শিক্ষা হলো আসল জিনিস। শিক্ষা পেলে তোমরা স্বাধীন। কারোর দাস-দাসী হবে না।


বানঃ ফাদার, আমরা শুনেছি অনেক মান্দি গ্রাম হারিয়ে গেছে, বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কেন এমন হয়েছে বলতে পারেন? আমরা বলতে পারি যেমন টেলকী পার্শ্বে নয়াপাড়া, দেয়াচালা, জালালপুর, দামাইলা...


ফাহোঃ আমি থাকতেই ৪০ টা মান্দি গ্রাম নাই। হারিয়ে গেছে। দেয়াচালা বিশপ পনেন-এর গ্রাম ছিল। এখন কেউ আর নাই। মান্দিরা চানচরা। স্রক্ দংনা মানজা। জুম চাষ করসে আর আরেক জায়গায় চলে গেছে। অশিক্ষিত ছিলো, তাই কিছু অত্যাচারও হয়সে। এখনও ভালো চাকুরী পাইলে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এটা উন্নয়নও বলতে পার। পরশু দিন ইন্ডিয়া থেকে মিলি আমাকে টেলিফোন কল দিসে। সে সাইনামারী গ্রাম ছেড়ে চলে গেসে এবং সেখানে পড়াশুনা করসে। আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলসে, বাংলা বা আচিক ভাষা বলেনি, অসম্ভব। শিক্ষিত হইলে অসম্ভবও সম্ভব হয়।


বানঃ আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যারা চলে যায় তারা ভাল থাকে, তাদেও উন্নতি হয়..


ফাহোঃ জালালপুর একটা গ্রাম ছিলো। পি,এ সাংমার জন্ম জালালপুরে। সে এই মধুপুরের ছেলে। পরে ইন্ডিয়া গিয়ে পড়াশুনা করে মানুষ হয়সে, পলিটিক্স করসে। সেখানে এমপি হয়সে, মন্ত্রী হয়সে। পরে লোকসভার স্পীকারও হয়সে। স্পীকার হবার পওে একবার পীরগাছা মিশনে আসছে। তার দুই ছেলেও এখন এমপি (এমএলএ)। ছোট মেয়ে আগাথা সাংমা পৃথিবী সব চেয়ে ছোট মন্ত্রী হয়সে খুব কম বয়সে। শিক্ষিত হলে তোমরাও হইতে পারবে!


বানঃ আপনি বলতে চাচ্ছেন..


ফাহোঃ আমিতো বলতেছি, পিএ সাংমা স্পীকার হয়সে, দিনাং কামাল যে ইনিডয়া গিয়ে জাস্টিস হয়েছে, আগাথা মন্ত্রী হয়সে। প্রথম জীবনে কষ্টকরতে হয়, তারপর শিক্ষিত হলে, সব কিছু তোমার হাতের মধ্যে। সব সহজ মনে হয়। আসলে অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করতে হয়।


বানঃ আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ভবিষ্যতে আমাদের এই মধুপুরেও..


ফাহোঃ হ্যা, এখন বললে অসুবিধা নেই। শিক্ষিত হইলে সব হইতে পারে। ইলেকশান করতে পারে, এমপি হইতে পারে, মন্ত্রী হইতে পারে। আমাদের দেশেও এখন গারো মন্ত্রী আছে, আছে না? শিক্ষিত হও, মধুপুরেও এমপি হবে, মন্ত্রী হবে...শিক্ষিত হইলে মান্দি সব কাজ করতে পারে... (প্রাণ খোলে হাসলেন ফাদার)।


বানঃ আপনি মান্দি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?


ফাহোঃ সবাই শিক্ষিত হইসে এবং সবাই সব কাজ করতে পারছে, সমাজের জন্য কাজ করসে।


বানঃ অ-নে-ক কঠিন স্বপ্ন..


ফাহোঃ কষ্ট করতে হবে। কষ্ট করলে অনেক সহজ।


বানঃ ফাদার..আমি মনে করি..


ফাহোঃ মনে রাখবে মান্দিরা খুব শান্তিপ্রিয়। ঝগড়া নেই, শান্তি আছে। সবাই এটা পছন্দ করে। তুমি যে-টা মনে কর আমিও তা-ই মনে করি। কিন্তু শিক্ষিত হইতে হবে সবার আগে।


বানঃ মান্দি ছেলে-মেয়েদের জন্য, যুবক-যুবতীদের জন্য কিছু বলবেন?


ফাদারঃ মান্দি ছেলে-মেয়েরা তোমরা শিক্ষিত হও এবং স্কুলে থাক। নিজের সমাজের জন্য কাজ কর।


বানঃ আপনার অনেক সময় নিলাম। আশা করি মান্দিরা আপনার পরামর্শ গুলো পড়বেন এবং উপকৃত হবেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ফাদার। আপনি ভালো থাকুন।


ফাহোঃ তুমি ঠিক ৯ টায় আসছ শীতের মধ্যে আশ্চর্য! তোমাকেও ধন্যবাদ। পড়াশুনা কর এবং সমাজের জন্য কাজ কর। যীশুনা রাসং।

NB: Here BAN stands for Babul Nokrek & FaHo stands for Rev. Fr Homorich Eugene CSC!

[ফাদার আরো অনেক কথা বলেছেন। যে কথাগুলো তিনি লিখতে না করেছেন, সেগুলো লেখা হয় নি।]

No comments: