Saturday, May 4, 2013

আমাদের তারা সাংমা



টিপু সাংমা। পেশায় প্রকৌশলী। আমার খুব স্নেহের একজন। প্রথমত সে আমার জুনিয়র বন্ধু। দ্বিতীয়ত 

সে আমার ভাগ্নি জামাই। স্ত্রী কন্যা নিয়ে সে ভীষণ সুখী মানুষ। খুব সৌখিন মানুষ। বউ বাচ্ছা, বাড়ি 

খুব পরিপাটি রাখতে পছন্দ তাঁর। তাঁর লেখা স্ট্যাটাস পড়লাম ফেইসবুকে! মনটা খুব খারাপ হয়ে 

গেলো...


কি লেখা এই স্ট্যাটাসে?

পড়ুন...  


"১০ অক্টোবর ২০১২, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে লিখিত নিয়োগ পরীক্ষা 

অনুষ্ঠিত হয়৷ গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড ওয়ার্ড নং ৫ এর এক আদিবাসী 

তারা সাংমা, মাতা কানন সাংমা, পিতা মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন সাংমা৷ 


এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা৷ তার লিখিত নিয়োগ পরীক্ষার রোল নং ৬৭৪৷ ভাওয়াল বদরে আলম 

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে বিএ অনার্স, এমএ ডিগ্রীপ্রাপ্ত, ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ 

নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের দিন - তারিখ - সময় সংবলিত 

চিঠিপ্রাপ্তির আশায় আশায় প্রায় দুই মাস কেটে যায়৷ অবশেষে শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ 

করে জানতে পারে যে, ২৭ মার্চ ২০১৩ সালে মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেছে৷ তারা সাংমা কর্তৃপক্ষের 

কাছে জানতে চান, হরতলের দিন মৌখিক পরীক্ষা (!) এ ছাড়া কোন ভাইভা কার্ড কেন তার বরাবর 

পাঠানো হয়নি ! প্রতিউত্তরে তাকে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের দীর্ঘদিন অতিবাহিত 

হলেও তারা সাংমা কেন তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত বা যোগাযোগ করেনি ! বললেন এভাবে তো 

চাকরি হয় না৷ তারা সাংমা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে৷ দ্বিতীয়ত. বিএ অনার্স এমএ, তৃতীয়ত. 

একজন সঙ্গীতশিল্পী এবং সংস্কৃতিকর্মী৷ চতুর্থত. একজন আদিবাসী৷ পঞ্চমত. উচ্চ শিক্ষিত, রুচিশীল, 

মার্জিত, শিল্প - সংস্কৃতি তথা মুক্তচিন্তা - বুদ্ধি চর্চার মানুষ, তাহলে কি পেছনের দরজা দিয়ে দেখা - 

সাক্ষাত বা যোগাযোগ অথবা (গিভ এ্যান্ড টেক) ফর্মুলায় মা এগুনোর কারণেই ভাইভা কার্ড তথা 

চাকরিটা মিস !




মাননীয় কমিশনারের কাছে ঘটনাটা খুলে বলার প্রেক্ষিতে তারা সাংমা জানতে পারেন, উত্তীর্ণদের 

লিস্ট অনুমোদনে কমিশনারের কাছে জেলা শিক্ষা অফিসার গেলে কমিশনার স্বাক্ষর প্রদানের আগে 

জানতে চান ; হরতাল বা যে কোন কারণে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এমন কেউ 

অবশিষ্ট আছে কিনা ? তারা সাংমার কোন মৌখিক পরীক্ষার কার্ড প্রেরণ করা হয়নি বা যে 

কোন কারণবশত তারা সাংমা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি জানা সত্ত্বেও কেন কর্তৃপক্ষ 

কমিশনার মহোদয়কে বলেছেন যে, মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার এমন কেউ আর বাকি নেই !



তারা সাংমা মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত, আদিবাসী কোটারও অন্তরভুক্ত, সঙ্গীতশিল্প - সংস্কৃতিমনা, 

উচ্চশিক্ষিতা৷ মেয়েটিকে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলে তার কঠোর ত্যাগ, অধ্যবসায়, সম্ভাবনাময় সুবর্ণ 

সুযোগের সিঁড়ি ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে দেয়া হলো৷ তারা সাংমার অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে 

তাহলে এটা নিশ্চিত সে ষড়যন্ত্রের শিকার৷



আমাদের প্রশ্ন কর্তৃপক্ষ কি বলতে পারবে তারা সাংমার চেয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন কোন প্রার্থী নিয়োগ 

পায়নি ? এতে কোন রকমের নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি৷ এ প্রকল্পের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান 

শিক্ষক পদের চাকরিটা তারা সাংমার অসহায় দরিদ্র  পরিবারটির জন্য খুবই জরুরী ছিল ! কেন সে 

বঞ্চিত হলো ? একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে ? একজন আদিবাসী বলে ? কে দেবে 

এর জবাব !" 



**এই খবরটি দৈনিক জনকন্ঠে ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয় লেখেছেন ডা. মো জয়নাল আবেদীন৷**

No comments: