Wednesday, May 1, 2013

বাংলাদেশের আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিঃ স্বপ্ন এবং বাস্তবতা







Posted: August 23, 2011 www.chtbd.net

বাবুল নকরেক

বাংলাদেশ সংবিধান দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করে, তা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। এটি বাঙালিদের অধিকার যেমন নিশ্চিত করে, তেমনি আদিবাসীদের স্বার্থও সংরক্ষণ করে! এখন প্রশ্ন হলো…এই সংবিধান কি সত্যিই আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়? অনেকেই মনে করেন, এটি আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। কারণ সংবিধানে কোথাও আদিবাসীদের কথা উল্লেখ নেই। যেখানে তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি-ই নেই, সাংবিধানিক অধিকার তো দূরের কথা।

ফলে দেশের যারা কর্ণধার, তাঁরা নিজেরাই আজ বিভ্রান্ত। তাঁরা একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। একেক রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও করছেন। এই দেখুন, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলছেন, “দেশে কোন আদিবাসী নেই।” অথচ তাঁর পররারাষ্ট্র মন্ত্রী ডাক্তার দিপু মনি কথা বলছেন আরেক ধাপ এগিয়ে। তিনি বলছেন, “আমরা বাঙালিরা-ই এদেশের আদিবাসী।” ভাবতে ভালই লাগছে আমার। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের সব বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা এখন আদিবাসী! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিও আদিবাসী! আদিবাসীদের এতে খুশিই হওয়ার কথা।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ-২৭ এ বলা আছে, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।”

সংবিধানে এমন সুবচন অত্যন্ত সুমধুর লাগে। অপর পক্ষে, বর্তমান এবং অতীতের অনেক বাজে দৃষ্টান্ত আমাদের সীমাহীন পীড়া দেয়। আমরা গভীর বেদনা এবং হতাশার সাথে লক্ষ্য করেছি ‘আইনের দৃষ্টি’ এবং ‘আইনের সমান আশ্রয় লাভ’ আদিবাসীদের ক্ষেত্রে অতীতে যেমন সমান প্রয়োগ ছিলো না, এখনও নেই এবং ভবিষ্যতেও প্রযোজ্য হবে না যতদিন পর্যন্ত এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ‘সাংবিধানিক স্বীকৃতি’র কথা উল্লেখ থাকছে আমাদের মহান সংবিধানে।

এক্ষেত্রে কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কিছু ভুমি লোভী, সন্ত্রাসীদের হাতে এমন কি কখনো কখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে অনেক আদিবাসী নেতা, কর্মী অতীতে খুন হয়েছেন। চলেশ রিছিল, স্কুল শিক্ষিকা বাসন্তী মাংসাং, আলফ্রেড সরেন, গিদিতা রেমা, সেন্টু নকরেক, পীরেন স্নাল, অধীর দফো, নিন্থনাথ হাদিমা, নিবাস মৃঃ, বিহেন নকরেকসহ অনেকের নাম উল্লেখ করতে পারি। তাদের কেউ আইনের সুবিচার পাননি। তাদের আত্মীয়দের অনেকেই খুনীদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করতে পারেননি। পুলিশ তাদের কোন অভিযোগ পর্যন্ত নথিভূক্ত করেনি, মামলা নেয়া তো অনেক পরের কথা।

চলেশ রিছিল ছিলেন একজন গারো আদিবাসী নেতা। তিনি খুন হন গত ১৮এপ্রিল ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তিনি খুন হন কাকরাইদের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে আটকাবস্থায়। যেখানে চলেশের স্ত্রী সন্ধ্যা সিমসাং এখনো পর্যন্ত স্বামীর খুনীদের বিরুদ্ধে মামলা-ই করতে পারেননি; সেখানে সংবিধানে উল্লেখিত ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’ এবং ‘আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ বিষয়টি আদিবাসীদের ক্ষেত্রে কিভাবে সমানভাবে প্রযোজ্য বলতে পারি?

সংবিধানের অনুচ্ছে-২৮(১) এ বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।”

কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে আমরা যা দেখি, এখানে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রযন্ত্র ধর্ম ও বর্ণের কারণে আদিবাসীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রদর্শন করে। সন্ধ্যা সিমসাং মামলা করতে পারেননি কারণ (ক) সে হলো এদেশে সংখ্যালঘু খ্রীষ্টান; (খ) সে জাতিতে গারো আদিবাসী; (গ) তার জন্ম বনে।

বিহেন নকরেক কে ১৯৯৬ সালে বন রক্ষী বন্দুক দিয়ে গুলি করে ঝাঝরা করে শুকনো জ্বালানি সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার সময়।  মহামান্য আদালত রায় দেন বিহেনের হত্যা ছিলো ‘জাস্টিফাইড’ যদিও পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ ছিলো বিহেন কে গুলি করা হয়েছে পেছন দিক থেকে। এটা কি জাস্টিফাইড ছিলো কারণ (ক) বিহেন ছিলো গরীব; (খ) তার জন্ম ছিলো বনে; এবং (গ) সে ছিলো সংখ্যালঘু গারো আদিবাসী?

আমাদের কাছে এটা বোধগম্য নয়, পেছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা কিভাবে ‘জাস্টিফাইড’ হয়? এই বিশেষ বিধান টা কি তবে শুধুমাত্র আদিবাসীদের ক্ষেত্রে আছে?

এই ভাবে, অনুচ্ছেদ-২৭ এবং ২৮(১) আদিবাসীদের কাছে অর্থহীন হয়ে গেছে। আমাদের জীবনে এই দু’টি ধারা থাকা না থাকা সমান হয়ে গেছে। ফলে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয় টা আজ অত্যন্ত একটি জরুরী বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।

সংবিধানের অনুচ্ছে-২৮(৪) বলা আছে, ‘‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত করিবে না।”

আমি মনে করি, বর্তমান সরকার এই ‘অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন’-এর সুযোগ নিয়ে ‘অনগ্রসর নাগরিকদের অগ্রগতির জন্য’ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারত।

মহাজোট সরকারের জন্য এটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল। ঠিক এখনই তারা আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের এবং পুরো দেশবাসীকে মহিমান্বিত করতে পারত। দেশের জাতি ও ভাষা বৈচিত্র্যকে আমলে নিয়ে, আদিবাসীদের প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে বৃহত্তর বাঙালি জাতি নিজেদের সম্মানিত করতে পারেন এবং বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারেন। সাথে সাথে আদিবাসীদের মৌলিক, সাংস্কৃতিক, ভূমির উপর তাদের ঐতিহ্যগত অধিকার সংরক্ষণের কাজটি নিশ্চিত করতে পারেন।

যেহেতু বর্তমান সংবিধান বিদ্যমান ৪৫ টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জীবনমানের এবং মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না; সেহেতু ‘অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন’-এর দিকে সরকারের মনোযোগ দেয়া উচিত। এ কাজটি করার জন্য, মহাজোট সরকারের যত শীঘ্র সম্ভব আদিবাসীদের ‘সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ দেয়া উচিত। আদিবাসীদের সাথে বর্তমান এই সরকারের সাথে সম্পর্কের ক্রমাবনতি লক্ষ্য করছি। আসলে কার সাথে এই সরকারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে? ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ কারোর সাথেই বর্তমান সরকারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলে থাকলে এক রকম আর ক্ষমতায় থাকলে আরেক রকম সেটা প্রমাণিত। তারা ক্ষমতায় থাকলে মিত্রদের চিনতে পারে না। আওয়ামী সরকার এখন শিষ্টের দমন আর দুষ্টের পালন করতে ব্যস্ত। “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’-নিউটনের এই তৃতীয় গতিসূত্র যদি কার্যকর হয় আর সরকার যদি তাদের এমন চরিত্র বজায় রাখে তবে আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

গত বছর জুলাই মাসে দেশের সেরা পত্রিকা দু’টি দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক প্রথম আলো, আদিবাসীদের জন্য একটি যুগান্তকারী খবর ছেপেছিল। খবরটি হলো ‘‘আদিবাসী বিষয়ক পার্লামেন্টারি ককাস” সরকারকে ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার’ নিশ্চিত করার জন্য আহবান করেছেন। অমি তখন একটা কলাম লিখেছিলাম বাংলা এবং ইংরেজিতে। দেশের স্থানীয়, জাতীয় এবং অনলাইন পত্রিকাগুলো বেশ ঘটা করে ছেপেছিল লেখাগুলো। সেদিন অতি-উৎসাহে বলেও দিয়েছিলাম: সাংবিধানিক স্বীকৃতি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং এটা কেবল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষেই সম্ভব। আজ ওয়াদা ভঙ্গকারী সরকারের কান্ড দেখে লজ্জা লাগছে খুব। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্ট্যু, নির্বাচনী  ওয়াদা ভুলে গেছে।

গত বছর ৯ আগস্ট, বিশ্ব আদিবাসী দিবসে লিখেছিলাম, “খবরটি বাংলাদেশে বসবাসরত ৪৫ টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর হৃদয় সত্যিই ছুঁয়ে যায়। আদিবাসী বিষয়ক পার্লামেন্টারি ককাস-এর কাছ থেকে এমন সুবচন শোনে আমাদের হৃদয় ও মন ময়ূরের মত না নেচে পারে না। যতদূর মনে পড়ে, এই কমিটি টি এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত হয়েছিল। এই কমিটি টি বঞ্চিত আদিবাসীদের ‘সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ দেয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যেখানে আদিবাসীরা নিজেদের ভূমিতে, যেখানে তারা জম্মেছে এবং বেড়ে উঠেছে সেখানেই যুগযুগ ধরে শোষিত এবং নিষ্পেষিত হচ্ছে। অবশ্যই ককাসের সদস্যগণ প্রশংসা পাওয়ার দাবী রাখেন, যাঁরা এই বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন। “ককাস সরকারকে দেশে বসবাস রত ৪৫ টি জাতিগোষ্ঠীকে ‘ক্ষদ্র জাতিগোষ্ঠী’ এর পরিবর্তে ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধানে ব্যবহার করার আহবান জানিয়েছেন। সদস্যদের মূখে ফুলচন্দন পড়–ক। সরকার ককাসের আহবানে খুব শীঘ্র সাড়া দিবেন বলেই আমরা আশা করছি। একটি বিশেষ কমিটি আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি দানের জন্য কাজ করছেন, বিষয়টি সরকার সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে ঘোষণা করবেন একটি বিশেষ কমিটি তা চান, এতে আমরা খুশি এবং অত্যন্ত আনন্দিত।

আমরা দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছিলাম যে, ককাস ১৩ টি পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে (ক) সংবিধান সংশোধন; (খ) আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি; এবং (গ) সমতল ভূমিতে বসবাসরত আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ আরো ১০ দফা।

এ সকল প্রস্তাবিত দফাসমূহ আমাদের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী। সত্যি কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশে বসবাসরত সকল আদিবাসীদের বহু প্রতিক্ষীত স্বপ্ন-মঞ্জরি। আমরা ১৯৯৩ সাল থেকেই, যে বছর থেকে আমারা ৯ই আগস্ট কে বিশ্ব আদিবাসী দিবস হিসেবে পালন করে আসছি তখন থেকেই এগুলো দাবী করে আসছি।

আমরা গভীর উৎকণ্ঠার সাথে পর্যবেক্ষণ করে আসছি, কিভাবে দেশের বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রতি বছর আদিবাসী দিবসে, বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত “সংহতি” স্মরণীকা-য় আমাদের ‘আদিবাসী’ বলে সম্বোধন করে চমৎকার বাণী দেন। আবার কিভাবে নির্লজ্জের মত বলে বসেন,“আমাদের দেশে কোন আদিবাসী নেই?” এই নাটকের অবসান হওয়া খুব জরুরী।

আমরা গভীর বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছি, জাতি সংঘে’র আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম অধিবেশনে, কিভাবে সরকার, রাষ্ট্র সেখানে বিশ্বের হাজারো নেতৃবৃন্দের সামনে আদিবাসীদের সম্পর্কে অবলীলায় অসত্য, বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দেয়।

আমরা কৃতজ্ঞ ককাসের কাছে যে, তারা ‘আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি’ দানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। তাদের ভূমির ঐতিহ্যগত অধিকারে স্বীকৃতিই তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। যদি সরকার তা বাস্তবায়ন করেন, তবে সেটি হবে পৃথিবীর জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু মাত্র তখনই আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারব আমরা আদিবাসী ভাই-বোনদের প্রতি কত উদার, যাদের দেশের সংবিধানেও অংশ রয়েছে…তখনই কেবল আমরা নিজেদের সভ্য জাতি বলে দাবি করতে পারব।

জনাব রাশেদ খান মেনন, যিনি একাধারে ওয়ার্কাস পার্টিরও সভাপতি এবং সংসদীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সভাপতি, যথার্থই বলেছেন,“আদিবাসীরা বর্তমানে শোচনীয় জীবন যাপন করছেন কারণ তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই।”

আপনি কল্পনা করতে পারবেন না, সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় তারা জীবন যাপন করতে এ দেশে কেমন অনিরাপদ বোধ করে। একটি উদাহরণ বোধ করি প্রাসঙ্গিক হবে। আমাদের একজন ভালো বন্ধু এবং স্কুল জীবনের সহপাঠী ভারতে আগা খান ফাউন্ডেশন-এ চাকুরি করে। পত্রিকায় এই প্রতিবেদন পড়ার পর সে আমাদের লিখে; সে ইন্ডিয়াতে স্টেল করার যে চিন্তা করেছিল, তা বাতিল করেছে; যেহেতু এখন দেশে আমাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি হয়ে যাচ্ছে। যদিও বাস্তবে তার এখনও কিছুই হয়নি। পূর্বে সে গারো হিল্স-এ স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাওযার চিন্তা করছিল কারণ সেখানে গারোদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আছে, এমনকি তাদের জন্য আলাদা স্টেট আছে, ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

আমাদের কিছু বন্ধুরা আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ পার্শ্ববতী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইন্ডিয়াতে ইতোমধ্যে অভিবাসী হয়েছে। আরো অনেকেই সে সকল দেশে চলে যাওয়ার চিন্তাও করছে এই প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে । কারণগুলো খুবই স্পষ্ট, এখানে আদিবাসীরা খুন হলেও মামলায় করা যায় না; বিচার মেলে না। আদিবাসীদের কথা, তাদের অধিকারের এদেশের সংবিধানে নেই। আমাদের প্রত্যাশা, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেলে তারা তাদের শেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আরেকবার ভেবে দেখবেন।

সম্মানীত পাঠকবৃন্দ, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য যে সুপারিশ তা বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে এখন আমরা প্রশ্ন তুলতেই পারি। রাজনীতিবিদগণ কদাচিৎ তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেন। সরকারও সাধারণতঃ তাই করে থাকে। বাস্তবতা হলো, কোন সরকারই আদিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেনি। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম বর্তমান সরকার বিগত সরকার থেকে একটু আলাদা হবে। কিন্তু মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তাঁর মন্ত্রী দিপু মনি’র বক্তব্য শোনার পর সে আস্থা থাকে কোথায়?

তাই আমরা আর স্বপ্ন দেখি না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান জোট সরকার, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ প্রদানের প্রশ্নে অসামান্য ভুমিকা পালন করবেন এবং তাদের চির বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে সত্যিকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মানের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন..যেখানে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’ এবং ‘আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ হবেন এমন আশা আর আমরা করি না। মাননীয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বই এটি সম্ভব বলে আমাদের যে বিশ্বাস ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে।

আদিবাসী মানুষেরা এই দেশে এমন পরিবেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে তাদেরও সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে; অন্যান্য নাগরিকদের মত তারাও সমান অধিকার ভোগ করবে। এমন দিন আসবে, যেদিন রাষ্ট্র স্বয়ং কখনো ‘‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন”  করবে না। এখানে সত্যি সত্যিই ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’ এবং ‘আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ হবেন । একটি স্বাধীন দেশের একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এটা কি খুব বেশি চাওয়া ছিল?

“অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়” এটা অনেক পূরনো কথা। আমাদের সবাই কে এখন এই কথার মর্ম বুঝতে হবে। এখনই সময়, নয়তোবা কখনো নয়।

</body>

No comments: